বিয়ের পূর্বে যে কাজ গুলো করে নেয়া ভালো

বিয়ের পূর্বে যে কাজ গুলো করে নেয়া ভালো
বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে একজন নারী এবং একজন পুরুষের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য এক সামাজিক সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। আর এক সময় এই সম্পর্কের মাধ্যমেই নারী ও পুরুষের ঔরসজাত হয়ে পৃথিবীর মুখ দেখে নতুন প্রজন্ম। তাই বিয়ের আগে বর এবং কনে উভয়কেই কিছু ডাক্তারি পরীক্ষা করিয়ে নিলে সেটা তাদের এবং আগামী ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যও বেশ মঙ্গল জনক হয়ে থাকে। তার জন্য কি কি করা যেতে পারে এবং তাতে কি পরিমান উপকার নিহিত রয়েছে - আসুন এ বিষয়ে বিস্তারিত দেখি।


বিয়ের পূর্বে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা:-

একথা আমরা সকলেই জানি যে, অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে করার ফলে স্বামী-স্ত্রী দুজনের স্বাস্থ্যেই এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। যা পরবর্তীতে সন্তানের ওপরও পড়ে। তাই বিয়ে করার পূর্বে স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই বয়স ভালো করে যাচাই করে নেওয়া দরকার। মেয়েদের ক্ষেত্রে নিয়মিত মাসিক হওয়া, হেপাটাইটিস সহ অন্যান্য সব ধরনের টিকা দেওয়া আছে কিনা এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে বিড়ি-সিগারেট, মদ ও অন্যান্য নেশাজাতীয় খাদ্য খাওয়ার অভ্যাস আছে কিনা তা আগে থেকেই জেনে নেয়া দরকার। এসব ক্ষেত্রে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে তা পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি ও এর কুফল পরবর্তী প্রজন্মের উপরও পড়ে। এছাড়া শারীরিক উচ্চতা, রক্তচাপ, ওজন এসব দিকও সম গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা দরকার।

 

বিয়ের বয়স:-

বিয়ের বিষয়ে বয়স খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বেশি বয়সে বিয়ে করার ফলে ছেলেদের ইনফার্টিলিটি অথবা বন্ধ্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি বয়সে বিয়ে হলে সন্তান মানসিক ও শারীরিক ত্রুটিসহ প্রতিবন্ধীও হওয়ার ঝুকি রয়েছে। ত্রিশ বছরের পর মেয়েদের প্রথম সন্তান নেওয়া খুবই ঝুকিপূর্ণ। তাই এসব দিক বিবেচনা করে বিয়ের আগে বয়সের দিকটা ভালো করে বিবেচনা করতে হবে। কেননা এর সাথে আগামী প্রজন্মের ভাগ্যও জড়িত।

বয়সের দিক ভাবতে গিয়ে অতি অল্পবয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়াও ঠিক নয়। কম বয়সে মেয়েদের গর্ভধারণ মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ। অল্প বয়সে সন্তান ধারণের ফলে আমাদের দেশে অনেক মেয়ের অকালমৃত্যু ঘটছে। এছাড়া ছেলে-মেয়ের বয়সের পার্থক্যের দিকটিও সমানভাবে নজড় দিতে হবে। ছেলে ও মেয়ের বয়সের মধ্যে ভারসাম্য না থাকলে পরবর্তীতে সংসার জীবনে একে অপরের বোঝাপড়াটা ঠিকমতো হয় না। যার ফলে সংসারের নানা ধরনের অশান্তি লেগেই থাকে। তাই সবদিক বিবেচনা করে বিয়ের আগে এই বিষয়টি অধিক গুরুত্বের সাথে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।


রক্তরোগ ঝুকি:-

একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে রোগ জীবাণু ছড়ানোর একটি অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে রক্ত। এটির মাধ্যমে সহজেই রোগজীবাণু একাধিক দেহে ছড়িয়ে পড়ে। তাই বিয়ের আগে নারী ও পুরুষ উভয়ের রক্ত পরীক্ষা করে নেওয়া ভালো। সাধারণত যাদের রক্তে আরএইচ (RH) ফ্যাক্টর নেই তারা নেগেটিভ গ্রুপের রক্তধারী। যেমন- এ নেগেটিভ, এবি নেগেটিভ। পজিটিভ রক্তধারী কোনো পুরুষের সাথে যদি এই নেগেটিভ রক্তধারী কোনো পুরুষের বিয়ে হয় তাহলে সন্তান জন্মদানের সময় দুর্ঘটনার আশংকা সৃষ্টি হয়। যেমন- অকাল গর্ভপাত হওয়া, শিশুর মৃত্যু হওয়া, জন্মগ্রহণকারী শিশুর হিমোফিলিয়া, থ্যালাসেমিয়া দ্বারাও আক্রান্ত হতে পারে। এসব অনাহুত পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য রক্তের গ্রুপ নির্ণয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

বন্ধ্যাত্ব সমস্যা:-

আমাদের দেশে অসংখ্য নারী ও পুরুষ বন্ধ্যাত্ব নামক এক ধরনের রোগে আক্রান্ত হন। এনিয়ে সমাজে নানা ধরনের কুসংস্কারও রয়েছে। যৌন অক্ষমতা, অ্যাজোসপারমিয়া এবং সন্তান ধারণে অক্ষমতার কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। বন্ধ্যাত্ব পুরুষ ও নারী উভয়েরই হতে পারে। এ ধরনের সমস্যা পরবর্তীতে সংসার জীবনে নানা ধরনের অশান্তির সৃষ্টি করে। আমাদের বর্তমান সমাজ জীবনে বিয়ের আগে এই ধরনের কোনো পরীক্ষা করার ব্যবস্থা না থাকলে আপাতদৃষ্টিতে অনিশ্চিত ভবিষ্যত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।


বংশগত রোগ:-

রোগের জীবাণু বহনকারী পুরুষ ও মহিলার ঔরসজাত সন্তানও জন্মের সময় মায়ের গর্ভ থেকেই সেই রোগের জীবাণু নিজের শরীরে বহন করে নিয়ে আসে। যা পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তার মাঝে প্রকাশ পেতে থাকে। সাধারণত মা-বাবা দুজনের অথবা যে কোনো একজনের জীন থেকে সন্তান এই রোগের ধারক হন। বংশগত রোগগুলোর মধ্যে রয়েছে – মৃগী, ডিপ্রেশন, কার্ডিওভাসকুলার ডিজেস, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, বিশেষ কয়েক ধরনের ক্যান্সার যেমন – ফুসফুসের ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, ডাযাবেটিস, আর্থাইট্রিস, গ্লুকোমা, ওবেসিটি, অস্টিওপোরেসিস, অ্যাজমা, মানসিক অসুস্থতা, প্রভৃতি।

সবক্ষেত্রে বংশগত রোগ শারীরিকভাবে প্রকাশ নাও পেতে পারে। যেসব ক্ষেত্রে শারীরিকভাবে প্রকাশ হয় না সেসব রোগের জন্য পরীক্ষা করা প্রয়োজন। একই গোত্রের ছেলে-মেয়ের মধ্যে বিয়ে হলে বিয়ের আগে শারীরিক পরীক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বংশগত রোগ দ্বারা সন্তানদের আক্রান্ত হওয়া নিয়ে ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। যেমন – হিমোফেলিয়ার বা রক্ত জমাট বাধার সমস্যা, কালার ব্লাইন্ডনেস প্রভৃতি রোগ সাধারণত মায়েদের থেকে ছেলে সন্তানদের উপর প্রভাব বিস্তার করে। এসব রোগ দ্বারা কন্যা সন্তানদের প্রভাবিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ ধরনের রোগ মহিলাদের মধ্যে পরিবাহিত হলেও তাদের নিজ দেহে তা প্রকাশ পায় না। পরবর্তীতে তা তার ছেলে সন্তানের দেহে প্রকাশ পায়। তাই বিয়ের পূর্বে রক্ত ও টিস্যু নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষা করে এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়াই ভালো।


যৌন-সংক্রান্ত রোগ:-

নারী বা পুরুষের পূর্বে কোনো যৌন রোগ থাকলে বিয়ের পর তাদের শারীরিক সম্পর্কের ফলে ঐই রোগের জীবাণু একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে মিশে যায়। সিফিলিস, গনোরিয়া, শ্যানক্রয়েড, জেনিটাল হারপিস সহ মরনঘাতী এইডসও এই পক্রিয়ায় একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়ায়। পরবর্তীতে এসব রোগের প্রভাব পরবর্তী প্রজন্মের উপরও পড়ে। তাই বিয়ের পূর্বে এসকল বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিলে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

তবে ডাক্তারি পরীক্ষার ফলাফল যাই আসুক না কেন সেটির উপর পুরোপুরি নির্ভর না করে কীভাবে সেই সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়া যায় সেই চেষ্টা করে সামনের দিকে এগুনোটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। তাছাড়া আমাদের বর্তমান সামাজিক কাঠামোয় কতজন এই পদ্ধতি মেনে চলবেন সে বিষয়েও রয়েছে যথেষ্ট সন্দেহ। তবে বিষয়গুলো মেনে চললে আমাদের সকলেরই উপকার ছাড়া কোনো অপকার হবে না এ বিষয়ে অন্তত আমাদের সাথে একমত হবেন আশা করি।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন