অর্শ (গেঁজ) হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

নানাবিধ কারনে অর্শ রোগ জন্মাইতে পারে। গুহ্য দ্বারে সুত্রবত কৃমি জনিত উপসর্গ এই রোগ অধিক হয়। অলস প্রকৃতির রোগী যাহারা বসিয়া বসিয়া দিন কাটায় তাহারা প্রায়ই এই পীড়ায় ভোগীতে দেখা যায়।

রোগ বিবরন :নানাবিধ কারনে অর্শ রোগ জন্মাইতে পারে। গুহ্য দ্বারে সুত্রবত কৃমি জনিত উপসর্গ এই রোগ অধিক হয়। অলস প্রকৃতির রোগী যাহারা বসিয়া বসিয়া দিন কাটায় তাহারা প্রায়ই এই পীড়ায় ভোগীতে দেখা যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য ও এই রোগের কারন। অর্শ রোগ প্রায়ই দুই প্রকার দেখা যায়। অন্তঃবলি। যে বলি গুহ্য দ্বারের ভিতরে থাকে তাহাকে বলে অন্তঃবলি ও বহিঃবলি। যে বলি গুহ্য দ্বারের ভিতরে থাকে তাহাকে বলি অন্তঃবলি আর গুহ্য দ্বারের বাহিরে থাকে তাহাকে বলে বহিঃবলি। অন্তঃবলি থেকে প্রায়ই রক্তস্রাব হয়। বহিঃবলি থেকে তেমন একটা রক্ত স্রাব হয় না । বংশগত কারনেও এই রোগ হইতে পারে ।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

কলিনসোনিয়া (Collinsonia) :যদি জানতে পারেন রোগীর কোষ্ঠবদ্ধ শুকনা মল অতি কষ্টে নির্গত হয়। গুহ্যদ্বার ব্যথা করে মনে হয় যেন কতগুলি কাচের টুকরা মলদ্বারে ঢুকিয়া রহিয়াছে, খোচা লাগে, রক্ত পড়ে, জ্বলে, রক্ত স্রাবীয় অর্শে ইহা মহৌষধ। ইহা ব্যবহারে বহু রোগী আরোগ্য হইয়াছে।

সেবন বিধি : শক্তি 6 বা 30 দিনে তিন বার । 200 দিনে ২ বার ।পুরাতন রোগে 1m 10m বা আরো উচ্চ শক্তি ।

ইসকিউলাস হিপ (Aesculas Hip): কোমরে ব্যথা এই ঔষধের নিত্য সহচর অর্শ গেজ রোগীর কোমরে অত্যন্ত ব্যথা রক্ত স্রাব তেমন একটা হয় না ।যদিও হয় অনেক দিন পরে অল্প ।মলদ্বারে খোচানি টাটানি ব্যথা মলদ্বারে চুলকায় জ্বলে ইত্যাদি লক্ষনে ইহা উপকারী ।

সেবন বিধি : শক্তি 3x 6 বা 30 দিনে তিন মাত্রা ।পুরাতন রোগে 200 বা 1m উপকারী ।

আর্সেনিক এলব (Arsenic Alb):অস্থিরতা খিট খিটে স্বভাব শীত কাতর রোগীদের মলদ্বারে অত্যন্ত জ্বালা ও বেদনা ছটফট করে ।সে জ্বালা ও বেদনা গরমে আরাম গরম সেকে আরাম হইলে আর্সেনিক অব্যর্থ ।আমি এক সময় একটি রোগী পাইয়াছিলাম গুহ্যদ্বারের জ্বালায় ও বেদনায় রোগী অস্থির ।চুলায় গরম মাটিতে গুহ্যদ্বারে লাগাইয়া সেক লইলে আরাম পাইত জানিয়া আমি তাহাকে আর্সেনিক 200 শক্তি 20 নং গ্লোবিউস 2 টি অর্ধ আউন্স ডিস্টিল ওয়াটের মিশাইয়া সেবন করিতে দেই ।দুই দিন পর সংবাদ পাইলাম রোগী ভাল আছে ।

এসিড সালফ (Acid Sulps): কাজে কর্মে অত্যন্ত ব্যস্ত সব কাজে তাড়াতাড়ি করে ।এই ধাতুর রোগীদের যদি জানিতে পারেন যে অর্শ বড় হইয়া মলদ্বারে বন্ধ হইয়া গিয়াছে ।গন্ধহীন রসে কাপড় ভিজিয়া যায় গুহ্যদ্বার জ্বলে ।এসিড সালফ দিবেন উপকার হইবে ।

সেবন বিধি :শক্তি 6 30 প্রত্যহ ৩ মাত্রা ।পুরাতন রোগে 200 1m ।



মেডিারিনাম (Medorrhinum): অর্শ গেজ বা ভগন্দর পীড়ায় মলদ্বার হইতে মাংস ধোয়া মত দুর্গন্ধ রস ঝরিলে মেডোরিনাম অব্যর্থ ।

সেবন বিধি :শক্তি 200 বা 1m সকাল বিকাল দুই মাত্রা ।পুরাতন রোগে 10m 50m বা cm অধিক উপকারী ।

এসিড নাইট (Acid Nit):খিট খিটে স্বভাব শীত কাতর প্রস্রাবে তীব্র গন্ধ সহজে ঠান্ডা লাগার প্রবনতা রোগীদের পায়খানা নরম বা শক্ত যাহাই হোক পায়খানার সময় ও পরে মলদ্বারে অত্যন্ত জোলা ।মলদ্বারে কতগুলি সুচ বা আলপিন ফোটানো খোচা লাগে এইরুপ অনুভবে ইহা উপকারী ।

সেবন বিধি : শক্তি 6 30 দিন তিন বার ।200 শক্তি দিনে ২ বার ।পুরাতন রোগে 1m 10m আরো উচ্চ শক্তি ।

এসিড মিউর (Acid Mur): মেজাজ খিট খিটে সামান্য কারনে রাগিয়া উঠে শীত কাতর ।এই ধাতুর রোগীদের জিজ্ঞাসায় জানিতে পারিলেন অর্শে টাটানি ব্যথা কাপড়ের ঘর্ষন লাগিলেও কষ্ঠ ।গরম জলে বা সেকে কিঞ্চত উপশম রোধ করে ।ঠান্ডা জলে যন্ত্রনা বাড়ে ।এসিড মিউর ব্যবস্থা করিবেন উপকারী হইবে ।

সেবন বিধি :শক্তি 30 বা 200 সকাল বিকাল ২ বার ।

এলো (Aloe): অলস প্রকৃতির দৈহিক বা মানসিক পরিশ্রমে অনিচ্ছা অল্প পরিশ্রম ক্লান্ত গরম কাতর পায়খানায় বসিয়া রেগ দিলে অর্শের বলী আঙ্গুরের থোকার মত বাহির হইয়া পড়ে ।গুহ্যদ্বার চুলকার জ্বলে ।সেই জ্বালা ঠান্ডা জলে আরাম বোধ করে ।ইত্যাদি লক্ষনে ইহা উপকারী ।

সেবন বিধি : শক্তি 6 30 ৩ বার ।পুরাতন রোগে 200 বা 1m ।

মিলিফোলিয়ম (Millefolium): যন্ত্রনাবিহীন অর্শ রোগ গুহ্যদ্বার হইতে টক টকে লাল রক্ত স্রাবে ইহা অব্যস্থ ।

সেবন বিধি : শক্তি Q ৩/৪ ফোটা অর্ধ ছটাক জলের সহিত প্রত্যহ ৩/৪ বার ।

ব্লমিয়া অডোরেটা (Blumia Odorata): ইহা আমাদের বাংলাদেশী ঔষধ ।রক্ত স্রাবীয় অর্শে একটি মহৎ একটি মহৎ কাযকারী ঐষধ ।সেবন বিধি : শক্তি Q 3/4 ফোটা অর্ধ ছটাক জলসহ দিনে ৩/৪ বার কিছু দিন সেবন করিতে হয় ।

এমোন কার্ব (Ammon Carb): ইহা রক্ত স্রাবীয় অর্শে একটি চমৎকার ঔষুধ শুকনা মল গাট হইয়া অতি কষ্টে নির্গত হয় ।রক্ত পরে মলদ্বার চুলকায় মল ত্যাগের সময় অর্শ বলি বাহির হইয়া পড়ে ব্যথা করে ।

সেবন বিধি : শক্তি 30 বা 200 দিনে ২ বার ।

নাক্স ভমিকা (Nux Vom): সালফার নানা প্রকার অর্শ রোগের এই ঔষুধ দুইটি ব্যবহার হইয়া আসিতেছে ।সকালে সালফার শক্তি 30 এক মাত্রা ।সন্ধ্যায় নাক্স শক্তি 30 এক মাত্রা ।এই ভাবে কিছু দিন সেবন করার পর উক্ত নিয়মে 200 শক্তি সেবন করিলে অর্শ রোগে উপকার হয় ।ডাঃ কালির মতে সালফার 1m 10m প্রাতে এক মাত্রা সেবনে অর্শ রোগে অব্যর্থ ফল হয় ।

বাইওকেমিক চিকিৎসা

ক্যালকেরিয়া ফ্লোর (Calcarea Fluor): সর্ব প্রকার অর্শ রোগে এই ঔষধ কাযকারী রক্ত স্রাবীয় অর্শ ফেরাম ফসের সহিত উক্ত ঔষধ ক্রমে সেবন করিলে উওম ফল পাওয়া যায় ।

সেবন বিধি : শক্তি 6x ২-৪ বড়ি এক মাত্রা বয়স অনুপাতে দিনে ৩/৪ বার।

ম্যাগনেসিয়া ফস (Magnesia Phos):অর্শ রোগীর মলদ্বারের ব্যথায় ইহা উওম কাযকারী ঔষধ ।সেবন বিধি : শক্তি 6x বা 3x ২-৪ বড়ি কয়েক মাত্রা বয়স অনুপাতে গরম জলসহ পুনঃ পুঃ কয়েক মাত্রা সেবনই যন্ত্রনা উপশম হয় ।লক্ষন অনুযায়ী হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সঙ্গে বাইওকেমিক ঔষধ পর্যায়েক্রমে সেবন আরো দ্রুত উপকার হয় ।

পথ্য ও আনুষাঙ্গিক ব্যবস্থা

অর্শরোগ আরোগ্য করিতে হইলে ঔষধ ব্যবহারে সঙ্গে নিয়ম নীতি পালন করিতে হইবে কোষ্ঠ যাহাতে পরিস্কার থাকে বিষয়ে চেষ্টা রাখিবে শীতল জলে স্থান ভাল সকাল বিকাল খোলা বাতাসে ভ্রমন করা হিত কর। পাকা বা কাচা বেল পোড়া সরবত সাগু ভিজাইয়া চিনিসহ সেবন প্রত্যহ বেশী করিয়া জল পান করা পুরাতন সরু চাউলের অল্প জীবিত মাছের সুপত্য। মাংস ডিম গরম মসলা চা কফি মদ্যপান বর্জনীয় । ক্যালকেরিয়া ফ্লোর : 1x বা 2x বিচুর্ণ এক ভাগ তিন ভাগ ভ্যাসিলিনের সাথে মিশ্রিত করিয়া অর্শ বলিতে বাহ্যিক প্রয়োগ উপকার হয় গুহ্যাদ্বারে জ্বালা যন্ত্রনা থাকিলে ইসকিউলাস হিপ Q এক ভাগ তিন ভাগ ভ্যাসিলিনের সাথৈ মিশ্রিত করিয়া বাহ্যিক ব্যবহারে উপকার হয় । রোগী বিবরন : মোঃ সহিদ উল্ল্যাহ বয়স ৪৫ বৎসর ।ফর্সা গোল চেহারা অলস প্রুকৃতি ব্যাক্তি প্রায় ১০ বৎসর অর্শ রোগে ভোগিতেছে ।মনে হয় মলদ্বারের ভিতর কতগুলো কাচের টুকরা বিদ্ধ হইতেছে ।মলদ্বারে সুচ ফোটানো যন্ত্রনা টাটানি ব্যথা জ্বালা তার উপর কোমর ব্যাথা নিত্য সহচর ।মলদ্বারে চুলকানি কোষ্ঠবদ্ধ ইসকিউলাস হিপ 1m সকাল বিকাল দুই মাত্রা ।দশ দিন পর সংবাদ পাইলাম বিশেষ কোন উপকার না হওয়ায় 10m শক্তি ২ টি গ্লোবাউলস অর্ধ আউন্স ডিষ্টিল ওয়াটের করিয়া সকালে খালি পেটে সেবন করিতে দেই ।পনের দিনের ফাইনাম দিয়া বিদায় করি ।পরবর্থী সংবাদ রোগী অনেকটা সুস্থ্য ।পুনরায় পনের দিনের ফাইনাম দিনের দেই তাহাতেই রোগী সুস্থ্য হয় ।

=====[ Be Careful ]=====

হোমিওপ্যাথিক ঔষুধ সেবন করার পূর্বে অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

অথাবা হোমিওপ্যাথিক ঔষধ অপব্যবহার জনিত কোন সমস্যা শিকার হলে এই পেইজ কর্তৃপক্ষ কোন দায়ী থাকবে না। ধন্যবাদ।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন