▓▓▒░ ডেঙ্গু জ্বর হোমিও চিকিৎসা ░▒▓▓
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরের উৎপাত শুরু হয়েছে। এটি সত্যিসত্যি একটি ভয়ঙ্কর ধরণের জ্বর। আমার এক পরিচিত যুবক বয়সী ভদ্রলোককে একদিন দেখলাম হঠাৎ করে ইয়া লম্বা দাঁড়ি রেখে দস্তুর মতো নামায-রোজা শুরু করে দিয়েছেন। তার হঠাৎ এরকম আমূল পরিবর্তনের কারণে জিজ্ঞেস করলে বললেন, “ভাই, হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলাম। ভাবিনি আজরাইলের হাত থেকে ছাড়া পাবো।
তাই নিয়ত করেছিলাম এই যাত্রায় বেঁচে গেলে ধর্মকর্মে আর কোন গাফিলতি করব না”। হ্যাঁ, এই রকম ঘটনা খোঁজ নিলে অনেক পাওয়া যাবে। যদিও বলা হয় যে, এডিস মশার দংশনের মাধ্যমে ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাস আমাদের শরীরে প্রবেশের ফলেই আমরা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হই কিন্তু এটি পুরোপুরি সত্য নয়। আসলে প্রতিনিয়ত হাজার, হাজার ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস বিভিন্নভাবে আমাদের শরীরে ঢুকিতেছে এবং বের হইতেছে, তাতে কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত হাজার ,হাজার রোগে আক্রান্ত হচ্ছি না।
আমরা তখনই রোগে আক্রান্ত হই যখন আমাদের জীবনীশক্তি বা রোগ প্রতিরোধশক্তি (immune system) দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তার কারণে জীবাণুরা আমাদের শরীরে বংশবিস্তার করার উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে যায়। আমাদের জেনে রাখা উচিত যে, বেশী, বেশী টিকা নেওয়া, বেশী ,বেশী ঔষধ খাওয়া, মাদকদ্রব্য সেবন করা, যৌন রোগে আক্রান্ত হওয়া, স্বাস্থ্য রক্ষার নিয়ম-কানুন মেনে না চলা, পযাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম / ব্যায়াম না করা, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহন না করা ইত্যাদি, ইত্যাদি কারণে (জন্মগতভাবে প্রাপ্ত মানবজাতির অমূল্য সম্পদ আমাদের এই) রোগ প্রতিরোধ শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।
লক্ষণ :- সামপ্রতিক কালে বাংলাদেশে ত্রাস সঞ্চারকারী এই ডেঙ্গু জ্বরের প্রধান লক্ষণ হলো তিনটি ০৪ জ্বর, চামড়ার নীচে লালচে দাগ (ৎধংয) পড়া এবং শরীর ব্যথা। জ্বরের তাপ থাকে খুব বেশী (১০৩ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। মাংস, হাড় এবং জয়েন্টে এমন প্রচণ্ড ব্যথা থাকে যে, মনে হবে কেউ যেন লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তার হাড়গুলো ভেঙ্গে গুড়াে করে দিয়েছে। আর এই কারণে ডেঙ্গু জ্বরের আরেক নাম হলো হাড়ভাঙ্গা জ্বর (Bone breaker)। তাছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাংঘাতিক মাথা ব্যথা এবং প্রচণ্ড বমি থাকে। চামড়ার নীচে ছোট ,ছোট লালচে দাগ পড়ে। ভীষণ দুর্বলতা, গলা ব্যথা, হাত-পায়ে পানি নামা ইত্যাদি থাকতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের দুটি পযায় আছে যার মাঝখানে জ্বরের বিরতি থাকে একদিন। ডেঙ্গু জ্বরের দ্বিতীয় পর্যায় হলো রক্তক্ষরণযুক্ত (hemorrhagic Fever) জ্বর। এসময় চামড়ার নীচে রক্তক্ষরণ হওয়ার কারণে লালচে দাগ পড়ে, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়, নাড়ির গতি ক্ষীণ। হয়ে পড়ে, শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, রোগী অজ্ঞান হয়ে পড়ে, পায়খানা-প্রস্রাব-বমির সাথে রক্ত যায় এবং রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এই জন্য চামড়ার নীচে রক্তক্ষরণ হওয়া মাত্রই রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে প্রেরণ করা উচিত। এই জ্বর সাধারণত ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সেরে যায়, তবে রোগীর স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ফিরে পেতে প্রায় এক মাস লেগে যায়।
প্রতিরোধ : ডেঙ্গু জ্বর শিশু, অসুস্থ এবং বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে প্রায়ই মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে পারে। কাজেই এটি প্রতিরোধের দিকে সকলকে গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য মশা মারতে হবে, মশার বৃদ্ধি বংশবৃদ্ধি বন্ধ করতে হবে। ডেঙ্গু মশা যেহেতু পরিষ্কার পানিতে ডিম পারে, সেহেতু পরিষ্কার পানি যাতে বাড়ির আশেপাশে কোথাও জমে থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। যেমন- এসি বা ফ্রীজের নীচে, ফুলের টবে, ছাদে ইত্যাদি। পাশাপাশি এমন ধরণের পোষাক পড়তে হবে যাতে মশা শরীরে কামড়াতে না পারে। ঘরে বাইরে মশার ঔষধ ছিটাতে হবে এবং মশারির নীচে ঘুমাতে হবে ।
চিকিৎসা :- ডেঙ্গু জ্বরের একটি শ্রেষ্ট ঔষধ হলো ইউপেটোরিয়াম পারফোলিয়েটাম (Eupatorium Perfoliatum)। এই হোমিও ঔষধটি এমন একটি গাছের রস থেকে তৈরী করা হয়, যেই গাছের আঞ্চলিক নাম হলো বোনসেট (Bone set) বা হাড় জোড়া লাগানো। এখানে লক্ষ্য করার মতো একটি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার এই যে, জ্বরের নাম হাড়ভাঙ্গা এবং তার ঔষধি গাছটির নাম হাড়জোড়া। ঔষধটি একই সঙ্গে ডেঙ্গু জ্বরের ঔষধ এবং ডেঙ্গু জ্বরের টিকা বা প্রতিষেধক (Vaccine) হিসাবে কাজ করে। ডেঙ্গু জ্বরে ইউপেটোরিয়াম পারফো খেতে পারলে আর অন্য কোন ঔষধ খাওয়ার প্রয়োজন হয় না।
তবে অন্য কোন ঔষধের সাথে খেলেও ইহার একশানে কোন বাঁধা পড়বে না। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, ইনফ্লুয়েঞ্জা, বার্ড ফ্লু, সিজনাল ভাইরাস জ্বর ইত্যাদি যে-কোন নামের জ্বরই হউক না কেন, এই ঔষধটি খেয়ে দারুণ উপকার পাবেন যদি তাতে প্রচণ্ড শরীর ব্যথা থাকে। অর্থাৎ প্রচণ্ড শরীর ব্যথাযুক্ত যে-কোন জ্বরে এটি প্রযোজ্য। তাছাড়া ডেঙ্গু জ্বরে এই ঔষধটি সেবন করলে স্বাভাবিক ডেঙ্গু জ্বরকে রক্তক্ষরণযুক্ত ডেঙ্গু জ্বরে রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমিয়ে দেয়। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে এটি ৩০ অথবা ২০০ শক্তিতে রোজ কমপক্ষে তিনবেলা করে খান।
আর যারা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হননি, তারা ডেঙ্গু জ্বরের হাত থেকে বাঁচার জন্য সপ্তাহে একমাত্রা করে খেয়ে যান। অত্যধিক জ্বরের সময় মাথায় ঠান্ডা পানি ঢালুন এবং ভিজা গামছা দিয়ে ঘনঘন শরীর মুছে দিতে থাকুন। হ্যাঁ, ঔষধের পাশাপাশি স্বাভাবিক খাবার, পানি ও শরবত প্রচুর পরিমাণে খেতে থাকুন। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ যদি অন্য কোন ঔষধের সাথে মিলে যায়, তবে সেটিই সেবন করুন।
{♦♦}=====[ Be Careful ]====={♦♦}
হোমিওপ্যাথিক ঔষুধ সেবন করার পূর্বে অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অথাবা হোমিওপ্যাথিক ঔষধ অপব্যবহার জনিত কোন সমস্যা শিকার হলে এই পেইজ কর্তৃপক্ষ কোন দায়ী থাকবে না। ধন্যবাদ।
Posted by ℬℋᏆℂ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন