বাত (ইংরেজি: Arthritis) (গ্রীক arthro - ,সন্ধি + –itis, প্রদাহ) হল মূলত অস্থিসন্ধির প্রদাহ যা এক বা একাধিক অস্থি সন্ধিকে আক্রান্ত করে। এটা শিল্পোন্নত দেশে ৫০-৫৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের মানুষের অক্ষমতার মূল কারণ।
বাত (আর্থ্রাইটিস) কথাটি ব্যাপক অর্থবহ এবং বহুদূর পর্যন্ত প্রসারিত। এটি একটিমাত্র রোগ নয় বরং একই পরিবারভুক্ত অনেকগুলো রোগের সমষ্টি। প্রায় ১০০টি বিভিন্ন ধরনের রোগ নিয়ে হয় বাতরোগ। এই রোগে প্রধানত অস্থিসন্ধি আক্রান্ত হলেও হাড়ের প্রদাহ, ক্ষয় রোগ, লিগামেন্ট ও টেন্ডনের ব্যথা, মাংসপেশীর ব্যথা, মেরুদণ্ডের প্রদাহ, ক্ষয়, আড়ষ্ঠতা এগুলোও বাতরোগের পর্যায়ে পরে।
প্রকারভেদঃ-
নিম্নোলিখিত রোগগুলোই সাধারণত একত্রিত হয়ে বাতরোগ গঠিত হয়ঃ
১। সন্ধিবাত/ গাঁট ফোলানো বাত (Rheumatoid Arthritis)
২। অষ্টিওআর্থ্রাইটিস (Osteoarthritis)/অস্থিসংযোগ গ্রন্থি প্রদাহ
৩। গেঁটেবাত (Gout)
৪। কটিবাত বা কোমর প্রদাহ (Lumbago)
৫। মেরুদণ্ড প্রদাহ বা স্পন্ডিলাইটিস (Spondylitis)
৬। সায়াটিকা/ কটি স্নায়ুশূল(Sciatica)
৭। আম বাত/আর্টিকেরিয়া/এলারজি(Urticaria)
৮। বাতজর (Rheumatic Fever)
৯। সংক্রামক বাত/সেপটিক আর্থ্রাইটিস
এছাড়াও ঘাড়ের বাত(Stiff Neck), স্কন্ধবাত (Omalgia), পার্শ্ববাত (Pleurodynia) এগুলোও বাত রোগের আওতার মধ্যে পরে।
বাতব্যাধির কারন ও ঝুকিসমূহঃ-
বাতব্যাধির প্রকৃত কারন উদ্ঘাটন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কষ্টসাধ্য। কেননা অনেকগুলো কারনে এই রোগসমূহের উদ্ভব হতে পারে। তবে নিম্নোক্ত কারনসমূহ বাত রোগের ঝুকি বাড়ায়ঃ
আঘাত (Trauma or Injury): পূর্ববর্তী বড় ধরনের কোন আঘাত বাতের কারণেরর অংশ হতে পারে।
অপুষ্টি (Malnutrition): প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজের অভাব বিশেষতঃ ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি।
বয়সঃ বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তরুণাস্থি ভঙ্গুর হয়ে পরে এবং এর পুনর্গঠনের ক্ষমতাও কমে যায়। তাই বয়স বাড়ার সাথে বাত রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনাও বাড়ে।
অতিরিক্ত ওজনঃ অস্থিসন্ধি ক্ষয় খানিকটা শরীরের বাড়তি ওজনের সম্পর্কিত। অতিরিক্ত ওজন জয়েন্টগুলোর উপর অতিরিক্ত চাপ স্থাপন করে। তাই স্থূলকায় ব্যাক্তিরা সাধারনত বাতরোগে বেশি ভুগে থাকেন।
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণঃ কতিপয় ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ যেমন ক্লিবসেলা (Klebsiella) ও এলার্জি স্বল্পমেয়াদী বাতব্যথার উদ্ভব ঘটাতে পারে। সংক্রমণের কারণে সংঘটিত বাতরোগকে রিএকটিভ আর্থ্রাইটিস (Reactive arthritis) বলে।
বংশগতি (Genetics): বাতরোগে বংশগতির প্রকৃত ভূমিকা কি তা এখন জানা সম্ভব হয় নি। তবে এতে বংশগতির যে সুস্পষ্ট প্রভাব আছে সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা একমত।
লক্ষণ ও উপসর্গ:-
যদিও বাত বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে সব বাত রোগের সাধারণ উপসর্গ হল বিভিন্ন মাত্রার ব্যথা, অস্থি-সন্ধি ফোলা, শক্ত হয়ে যাওয়া, আড়ষ্টতা এবং গাঁটের চারপাশে স্থায়ী যন্ত্রণা।
অন্যান্য উপসর্গসমূহ হলঃ
হাত ব্যাবহারে অক্ষমতা, হাঁটতে অক্ষমতা, অস্বাচ্ছন্দ্য এবং গ্লানি বোধ, ওজন কমে যাওয়া, পেশীর ব্যথা ও দুর্বলতা, পরিমিত ঘুম না হওয়া।
রোগতত্ত্বঃ-
অস্থিসন্ধি (Bone Joint) হল দু’টি হাড়ের যুগ্ন অবস্থান। এটি দুই ধরনের হতে পারে।
১। অচল বা সামান্য সঞ্চালনক্ষম অস্থিসন্ধি/গহব্বরশূন্য অস্থিসন্ধি
২। সঞ্চালনক্ষম অস্থিসন্ধি/সাইনোভিয়াল অস্থিসন্ধি/ গহব্বরযুক্ত অস্থিসন্ধি
শরীরের ভিতরের সচল অস্থিসন্ধিসমূহে যেমন হাত পায়ের আঙ্গুল,হাঁটু, কব্জি, গোড়ালি ইত্যাদিতে যে হাড়দ্বয় যুক্ত থাকে তাদের যুক্তপ্রান্তে তরুনাস্থি(Cartilage) থাকে। এই তরুনাস্থি হাড়দ্বয়ের সঞ্চালনজনিত ঘর্ষণ প্রতিহত করে। ফলে দৈনন্দিন জীবনে স্বাভাবিক অস্থিসন্ধি সঞ্চালন হয় বেদনাহীন। কোন কারনে তরুনাস্থির অবক্ষয় হলে তা অস্থিসন্ধির সঞ্চালনে যন্ত্রণা সৃষ্টি করে।
এই অস্থিসন্ধিগুলো আবার এক বিশেষ ধরনের ঝিল্লীদ্বারা আবৃত থাকে এবং অন্তঃস্থ অংশটি ঝিল্লীর রস বা সাইনোভিয়াতে পরিপূর্ণ থাকে। এই রস অস্থি, তরুনাস্থির পুষ্টি যোগায়। আর লিগামেন্ট মাংসপেশীর সাথে অস্থিগুলোকে সংযুক্ত করে। বাত রোগে এই ঝিল্লী, ঝিল্লীর রস, লিগামেন্টও বিভিন্নভাবে যেমন শরীরের প্রতিরক্ষা উপাদান, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদির দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে।
Kalmia Lat: বাত ব্যাথা উপর দিক থেকে নিচের দিকে চালিত হয়। হাঁটুর বাত। খোঁচামারা, তীর বিদ্ধবৎ ও চেপে ধরার ন্যায় বেদনা। স্থান পরিবর্তনশীল বাতের সাথে হৃদরোগ থাকলে ইহা অব্যর্থ। প্রাথমিক অবস্থায় ৩x-৩০ শক্তি, পরনো হলে ২০০ থেকে পর্যায়ক্রমে উচ্চশক্তি।
Ledum Pal: বাত ব্যাথা নিচের দিক থেকে উপর দিকে চালিত হয়। গাঁট ফোলে, রাতে ব্যাথা কমে, ঠান্ডায় উপশম বোধ। ২০০ থেকে পর্যায়ক্রমে উচ্চশক্তি।
Guaiacum: হাতে বা কাঁধে বাত, সায়েটিকা, কোমরে বাত (Lumbago), গোড়ালির বাত যা সারা পায়ে ছড়িয়ে পড়ে, মাথায় ও ঘাড়ে বাত, হাঁটু ফোলা ও বেদনা, সামান্য চাপে যন্ত্রণার বৃদ্ধি, গরম সহ্য হয়না (চাপ-তাপ অসহ্য)। প্রাথমিক অবস্থায় ৩x-৩০ শক্তি, পরনো হলে ২০০ থেকে পর্যায়ক্রমে উচ্চশক্তি।
Causticum: বিমর্ষ শোকগ্রস্থ, অন্যের দুঃখে কষ্ট পায়, হতাশ এমন ব্যক্তির বাত আক্রান্ত স্থান শক্ত ও আড়ষ্ট হয়ে থাকে। হাঁটুতে উরুতে ও পায়ে খিঁচেধরা বা ছিঁড়ে ফেলার মত বেদনা। রাতে বৃদ্ধি। বাত জনিত পক্ষাঘাত। ২০০ থেকে উচ্চশক্তি।
Rhus Tox: জলে ভিজে বা স্যাঁতসেঁতে স্থানে বসবাসের ফলে বাত। নড়াচড়া ও উত্তাপে উপশম। ৩০-২০০ শক্তি।
Urtica Uren: গেঁটে বাতের অব্যর্থ ঔষধ। বিভিন্ন স্থানের গাঁট (Joint) ফোলে ব্যথা। নড়াচড়ায় বৃদ্ধি। Q শক্তি প্রযোজ্য।
বায়োকেমিকঃ BP-19
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন