ঘাম (Sweat) এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা।

ঘাম শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি। গরমে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে তা স্বাভাবিক রাখতে ঘাম হয়। এছাড়াও ঘামের সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ বেরিয়ে যায়। গরমের দিনে ঘাম হওয়া অতি সাধারণ একটি বিষয়। তবে অতিরিক্ত ঘামের কারণে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

মানুষের শরীরে অ্যাক্রিন ও অ্যাপোক্রিন গ্ল্যান্ড নামক দুইধরনের ঘামগ্রন্থি থাকে। রোদের কারণে শরীরের তামপাত্রা বেড়ে যায়। তাই তাপমাত্রা স্বাভাবিক করে আনার জন্য ঘাম হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদান বের করে দেওয়ার মাধ্যমে শরীরের ‘প্রটেকটিভ মেকানিজম’ হিসেবেও কাজ করে ঘাম।

গরম ছাড়াও পরিশ্রম, উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা, ভয়, রাগ ইত্যাদি কারণেও ঘাম হতে পারে। ঠাণ্ডা পরিবেশেও অনেকের হাত ও পায়ের তালু ঘামার সমস্যা দেখা যায়। এ ধরণের রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই থাইরয়েড গ্রন্থি কিংবা বিভিন্ন হরমোনজনিত সমস্যায় আক্রান্ত। নিউরোলজিকাল ও ঘুমের ওষুধ সেবন করলে কিংবা রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণেও ঘাম হতে পারে।

শরীরে ব্যাকটেরিয়া ছড়ানোর অন্যতম মাধ্যম হল ঘাম। ঘামাচি, চুলকানি, ব্রণ ইত্যাদি তো আছেই। তাছাড়া শরীরের ক্ষতস্থানেও ঘামের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে।

এছাড়া অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়, ফলে পানিশূন্যতায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ঘামে ভেজা পোশাক দীর্ঘ সময় পরে থাকার কারণে ছত্রাকের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শরীর ঘামে ভেজা থাকলে ত্বকে ধুলাবালি আটকে থাকার পরিমাণও বেড়ে যায়।

ঘামের কিছু উপকারী দিকও আছে। এ সম্পর্কে ঘামে শরীর ভেজা থাকার কারণে হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমে যায়। পাশাপাশি শরীর থেকে অতিরিক্ত লবণ বের করে দিয়ে লবণের ভারসাম্য বজায় রাখে।

ঘাম নিজে কোন রোগ নয় অন্য রোগের উপসর্গ মাত্র। সাইকোটিক রোগীদের ঘাম সাধারণত দুর্গন্ধযুক্ত হয়। জ্বরে অন্যান্য লক্ষণ কমার সাথে সাথে ঘাম হলে শুভ লক্ষণ কিন্তু অন্যান্য উপসর্গ হ্রাস না হয়ে শুধু ঘাম হলে কুলক্ষণ। সামান্য পরিশ্রম বা পরিশ্রম না করেও অধিক ঘাম হলে তার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিম্নরূপঃ

Silicea: শীতকাতর রোগীর হাত পায়ের তালুতে দুর্গন্ধ ঘাম। মাথার সম্মুখভাগ বা মুখমন্ডলের ঘাম। ২০০-১এম শক্তি কার্যকরী।

Caladium Seg: ঘাম মিষ্টি, ঘামে মাছি বসে। ২০০শক্তি প্রযোজ্য।

Acid Nit: শীতকাতর, ক্রোদ্ধ স্বভাব, ভীরু, প্রস্রাবে তীব্র গন্ধ, হাতে পায়ে বগলে দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম। ঘাম জনিত কারণে পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে ঘা। ২০০-১এম শক্তি।

Calcarea Carb: মোটা থলথলে মেদপূর্ণ রোগীদের সমস্ত শরীরে টক গন্ধযুক্ত ঘাম। মাথার ঘামে বালিশ ভিজে যায়। ২০০ থেকে পর্যায়ক্রমে উচ্চশক্তি।

Acid Lactic: হাত পায়ের তালু অধিক ঘামে। লিখতে গেলে ঘামে কাগজ ভিজে যায়। গন্ধহীন ঘাম। ৩০-২০০ শক্তি উপকারী।

Veratrum Alb: নতুন পুরাতন যেকোন রোগেই কপালে ঠান্ডা ঘামের উপসর্গ দেখা দিলে ইহা ফলপ্রদ। ৬-৩০ শক্তি প্রযোজ্য।

Bovista: শীতকাতর রোগীর ঘামে রসুনের গন্ধ। ৩০-২০০ শক্তি সেব্য।

Psorinum: শীতকাতর, স্নান করতে চায়না। অপরিচ্ছন্ন থাকে এমন ধাতুর রোগীদের দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম। ২০০-১এম উপকারী।

Conium: শুধুমাত্র ঘুমালে বা তন্দ্রা এলে সারাদেহে ঘাম হয়। ২০০-১এম শক্তি প্রযোজ্য।

Thuja Occ: বদমেজাজী নাতিশীতোষ্ণ রোগী নিদ্রা অবস্থায় ঘাম। ঘুম ভাঙিলে ঘাম বন্ধ। ২০০-১এম শক্তি ফলপ্রদ।

China: অধিক ঘাম জনিত দুর্বলতা। ৬-৩০ শক্তি উপকারী।



বায়োকেমিকঃ Natrum Mur: অল্প পরিশ্রমে অনেক ঘাম তজ্জনিত দুর্বলতা। ১২X-৩০X সেব্য।




নবীনতর পূর্বতন