ডায়রিয়া হলে করণীয়।

সহজ কথায় বলতে গেলে, ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হওয়াকে ডায়রিয়া বলে । লক্ষ্য করলেই বোঝা আবে যে এই সংজ্ঞাটির দুটি শর্ত রয়েছে

* পায়খানা পাতলা হওয়া অর্থাৎ মলে পানির পরিমাণ স্বাভাবিকের চাইতে অনেক বেশি হওয়া ।
* ঘন ঘন (বার বার) পায়খানা হওয়া অর্থাৎ পায়খানা বার এ বেড়ে যাওয়া, সাধারণত ২৪ ঘন্টায় তিন বা তারও বেশি বার পায়খানা হলে ডায়রিয়া বলা হয় ।

ডায়রিয়ার কারণ:-
* দূষিত খাবার
* দূষিত পানি
* রোগ জীবানু
* কৃমি

পানিস্বল্পতাঃ-
সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি ও লবণ জাতীয় পদার্থ শরীরে না থাকলে তাকে পানি স্বল্পতা বলে । ডায়রিয়া হলে পায়খানার সঙ্গে পানি এবং লবণ জাতীয় পদার্থ শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে থাকে । এছাড়াও অধিক পরিমাণ বমি ও অতিরিক্ত জ্বরের ফলে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে তরল পদার্থ এবং লবণ হারাতে পারে । শরীরের ক্ষতি যথাযথ ভাবে পূরণ না হলে স্বাভাবিকভাবেই পানি স্বল্পতা দেখা দেয় ।

রিহাইড্রেশণঃ-
মুখে খাওয়ার স্যালাইন দিয়ে শরীরের পানি ও লবণের ঘটতি অর্থাৎ পানি স্বল্পতা পূরণ কে বলা হয় রিহাইড্রেশন । খাবার স্যালাইন দিয়ে এরূপ ঘাটতি পূরণের চিকিৎসাকে বলা হয় ওরাল রিহাইড্রেশন থেরাপিএবং যে লবণ দ্বারা চিকিৎসা চালানো হয় তাকে বলা হয় ওরাল রিহাইড্রেশন স্যলাইন বা খাবার স্যালাইন ।

ডায়রিয়ার চিকিৎসাঃ-
* বার বার খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
* বেশি করে তরল খাবার যেমন-ভাতের মাড়, চিড়ার পানি ডাবের পানি খাওয়াতে হবে।
* আর্সেনিক মুক্ত নিরাপদ টিউবওয়েলের পানি খাওয়াতে হবে। টিউবওয়ালের পানি পাওয়া না গেলে পুকুর বা নদীর পানি চুলায় চড়িয়ে বুদবুদ ওঠা থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত ফুটিয়ে খাওয়াতে হবে।
* শিশুকে স্বাভাবিক খাবার খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে। অল্প অল্প করে বার বার খাওয়াতে হবে।
* যে সব শিশু মায়ের দুধ খায় তাদের ঘনঘন মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে।
* স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ মোতাবেক জিন্ক খাওয়াতে হবে।

ডায়রিয়া হলে যা করা যাবে না:-
* খাবার বন্ধ করা যাবে না।
* স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ ছাড়া ঔষধ দেয়া যাবে না।

স্যালাইন বানানো ও খাওয়ার নিয়ম:-
* পুরো এক প্যাকেট স্যালাইন আধা লিটার পানিতে একবারেই ঢেলে দিতে হবে
* স্যালাইন পানিতে পুরোপুরি না মিশে যাওয়া পর্যন্ত নাড়তে হবে
* ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য প্রতি বার পায়খানার পর ১০-২০ চা চামচ পরিমাণ স্যালাইন খাওয়াতে হবে
* ২ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য প্রতি বার পাতলা পায়খানার পর ২০-৪০ চা চামচ পরিমান স্যালাইন খাওয়াতে হবে বা যতটুকু খেতে চায় সেই পরিমাণ খাওয়াতে হবে।
* প্যাকেট থেকে বানানো স্যালাইন ১২ ঘন্টা পর্যন্ত খাওয়ানো যায়।

কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে:-
* যদি শিশু নেতিয়ে পড়ে বা অজ্ঞান হয়ে যায়।
* যদি খিঁচুনী হয়।
* যদি শিশুর বেশী বেশী পায়খানা বা বমি হয়।
* যদি শিশু খাবার খেতে না পারে।
* শিশুর যদি চোখ বসে যায়।
* শিশুর পাতলা পায়খানায় যদি রক্ত থাকে।

ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয়:-
*৬ মাসের কম বয়সী শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের দুধ ও স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
* যদি সম্ভব হয় তবে শিশুকে অসুস্থ লোক বা রোগী থেকে দূরে রাখতে হবে।
* খাবার তৈরীর আগে, শিশুকে খাওয়াবার পূর্বে এবং পায়খানার পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।
* সব সময় সিদ্ধ ঠান্ডা পানি ব্যবহার করতে হবে।
* বোতলের দুধ খাওয়ানোর থেকে বিরত থাকতে হবে।
* ছোট বাচ্চাদের খাওয়ানোর সময় চামচ ব্যবহার করতে হবে।
* জলাবদ্ধ পায়খানা ব্যবহার করতে হবে।
* শিশুকে হামের টিকা দিতে হবে।
নবীনতর পূর্বতন